১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এআই-এর উত্থান: সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কোন পেশাগুলো?

ঢাকা, ৪ আগস্ট ২০২৫: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের বাজারে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। চ্যাটজিপিটি, মিডজার্নি-এর মতো জেনারেটিভ এআই টুলগুলো এখন এমন সব কাজ করতে সক্ষম, যা আগে কেবল মানুষই করতে পারত। এর ফলে অনেক পেশাজীবীর মধ্যে চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে—এআই আসার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে কোন পেশাগুলো?

প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলত দুই ধরনের কাজ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে:

১. পুনরাবৃত্তিমূলক এবং ডেটা-নির্ভর কাজ (Repetitive and Data-Driven Jobs): যেসব কাজে প্রতিদিন একই ধরনের রুটিনমাফিক কাজ করতে হয় এবং প্রচুর ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয়, সেগুলো এআই দিয়ে খুব সহজে এবং দ্রুত করা সম্ভব। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে:

  • গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি (Customer Service Representative): এআই চালিত চ্যাটবট এবং ভয়েসবটগুলো এখন ২৪/৭ গ্রাহকদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এর ফলে কল সেন্টার এবং গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা কমছে।
  • ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (Data Entry Operator): হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য নির্ভুলভাবে এবং দ্রুততার সাথে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করার কাজটি এআই সফটওয়্যার মানুষের চেয়ে অনেক ভালোভাবে করতে পারে।
  • অ্যাকাউন্টিং ও বুককিপিং (Accounting & Bookkeeping): বেসিক অ্যাকাউন্টিং, ইনভয়েস তৈরি এবং আর্থিক ডেটা বিশ্লেষণের মতো কাজগুলো এখন বিভিন্ন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে পারছে।
  • অনুবাদক (Translator): সাধারণ অনুবাদ বা লেখা ট্রান্সলেট করার ক্ষেত্রে গুগল ট্রান্সলেট বা ডিপএল-এর মতো এআই টুলগুলো এখন যথেষ্ট উন্নত। যদিও সৃজনশীল এবং সূক্ষ্ম অনুবাদের জন্য এখনও মানুষের প্রয়োজন, তবে সাধারণ অনুবাদের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।

২. সৃজনশীল এবং প্রযুক্তিগত খাতের প্রাথমিক স্তরের কাজ (Entry-Level Creative and Technical Jobs): একটা সময় ধারণা করা হতো যে সৃজনশীল কাজগুলো এআই কখনো করতে পারবে না, কিন্তু জেনারেটিভ এআই সেই ধারণাকে বদলে দিয়েছে।

  • গ্রাফিক ডিজাইনার (Graphic Designer): মিডজার্নি বা ডাল-ই-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন টেক্সট কমান্ড থেকেই লোগো, পোস্টার বা যেকোনো ধরনের ছবি তৈরি করে দিতে পারে। ফলে বেসিক ডিজাইনের কাজের জন্য এখন আর ডিজাইনারের প্রয়োজন হচ্ছে না।
  • কন্টেন্ট রাইটার ও কপিরাইটার (Content Writer & Copywriter): ব্লগ পোস্ট, মার্কেটিং ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ক্যাপশন বা বিজ্ঞাপনের কপি লেখার কাজ এখন চ্যাটজিপিটি-এর মতো টুল দিয়ে সহজেই করা যাচ্ছে।
  • জুনিয়র প্রোগ্রামার বা কোডার (Junior Programmer/Coder): এআই এখন কোডিংয়ের ছোটখাটো ভুল সংশোধন করতে এবং সাধারণ কোড লিখে দিতে পারে। এর ফলে এন্ট্রি-লেভেল প্রোগ্রামারদের কাজের সুযোগ কমতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) এবং ডেটা এন্ট্রির মতো খাতে প্রচুর মানুষ কর্মরত, সেখানে এআই-এর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় হতে পারে। এই খাতের работников নতুন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত না করলে ভবিষ্যতে তারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।

বিশেষজ্ঞদের মত: প্রযুক্তি বিশ্লেষক আহমেদ শাফি বলেন, “এআইয়ের কারণে কিছু পেশা হারিয়ে গেলেও বহু নতুন পেশার সুযোগ তৈরি হবে। যেমন – প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার, এআই এথিক্স স্পেশালিস্ট, মেশিন লার্নিং ডেভেলপার ইত্যাদি। মূল কথা হলো, ভয় না পেয়ে পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। যারা এআই-কে নিজের কাজের সঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতে শিখবে, তারাই কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকবে এবং উন্নতি করবে।”

সুতরাং, এআই কর্মসংস্থান কেড়ে নেবে—এই ভয় পুরোপুরি অমূলক না হলেও, এটি মূলত কাজের ধরনকে বদলে দেবে। ভবিষ্যতের কর্মবাজারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে ক্রমাগত নতুন দক্ষতা অর্জন বা ‘আপস্কিলিং’-এর কোনো বিকল্প নেই।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ আপডেট

Your Ad Here
Ad Size: 336x280 px