ধরা যাক, আপনার জন্ম হয়েছে নিপীড়নমূলক ও একনায়কতান্ত্রিক দেশে, আপনার হাতে এক টাকাও নেই, তখন ভবিষ্যৎ বলে কিছুই থাকে না। জীবনে যে কখনো উন্নতি হবে, এমন ভাবনাও আসে না। তখন আপনি ভাবেন, আদৌ আশা আছে কি? ৭৯ বছর বয়সী শতকোটিপতি স্টিভেন উডভার-হ্যাজি ফোর্বস ম্যাগাজিনকে এ কথা বলেন।
হাঙ্গেরি থেকে শিশু বয়সে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান স্টিভেন। ১৪ বছর বয়সে ম্যানহাটানের একটি গুদামে ঘণ্টায় মাত্র ৩০ সেন্টের বিনিময়ে বাক্স গোছানোর কাজ নেন। পরবর্তীকালে তিনি বিমান লিজিং শিল্পের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।
বিষয়টি হলো, কপর্দকহীন অভিবাসী হিসেবে কেউ যখন ধনী কোনো দেশে পাড়ি জমান, তখন তাঁর মানসিকতাই বদলে যায়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নাগরিকদের চেয়ে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশের নাগরিকেরা জন্মসূত্রেই স্বাধীনতা, সুযোগ-সুবিধা ও ভোগ-বিলাসে অভ্যস্ত। কিন্তু এই অভিবাসীদের তা অর্জন করে নিতে হয়।
হ্যাজি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মানুষ একদম অন্য প্রান্ত থেকে জীবন শুরু করেন, তখন জীবনের মূল্য তৈরি করা অন্যতম লক্ষ্য হয়ে যায়। এ সময় মানুষ যাঁদের সহায়তা পায়, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে। মানুষের জীবনের লক্ষ্য তখন স্পষ্ট হয়ে যায়—যত দ্রুত সম্ভব সেই দুঃসহ অতীত থেকে বেরিয়ে আসা। অভিবাসীদের এই যে জেদি মনোভাব, ঠিক সেখানেই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকদের চেয়ে তাঁরা একেবারেই আলাদা। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের সবখানেই অভিবাসীদের এ মনোভাব দেখা যায়।
ফোর্বসের ২০২৫ সালের তালিকা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী শতকোটিপতির সংখ্যা এখন ১২৫। ২০২২ সালে যা ছিল ৯২ জন, অর্থাৎ সেখান থেকে এ সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বেশি। এই শতকোটিপতিদের আগমন ৪১টি দেশ থেকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ শতকোটিপতির মধ্যে তাঁদের অনুপাত তেমন একটা বেশি নয়, ১৪ শতাংশ। সম্মিলিতভাবে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের শতকোটিপতিদের সম্পদের প্রায় ১৮ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অভিবাসী ধনীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ধনী ভারতীয়। দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করা ১০ জন এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে ৩ জনেরই শিকড় ভিন্ন দেশে।
নতুন মুখের মধ্যে আছেন ইরানি বংশোদ্ভূত মাকি জানাগানে। তিনি বলেন, অভিবাসী হওয়ার অর্থ হলো নিজের শিকড় না ভুলে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া এবং প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানো। ইউরোপের রোবোটিক সার্জারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কাজ করার পর ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বর্তমানে তিনি বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সামিট থেরাপিউটিকসের সহপ্রধান নির্বাহী। তাঁদের সম্ভাবনাময় ক্যানসারের ওষুধের কারণে শেয়ারের দাম এক বছরে প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়েছে। সেই সূত্রে জানাগানে শতকোটিপতির তালিকায় উঠে এসেছেন।
সফলতার প্রসঙ্গে জানাগানে বলেন, ‘ব্যবসাতেও নিয়ম এক—আপনাকে সজাগ থাকতে হবে, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকতে জানতে হবে। আমি সেই মানসিকতা নিয়েই এগিয়েছি।’
তালিকায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শতকোটিপতি উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পেয়েছেন অথচ অভিবাসীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই স্বনির্ভর—নিজের চেষ্টায় সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশই ধনী হয়েছেন প্রযুক্তি (৫৩ জন) বা আর্থিক খাত (২৮ জন) থেকে।
এই অভিবাসীদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য এসে থেকে গেছেন। যেমন ইলন মাস্ক কিংবা সাইবার নিরাপত্তা খাতে সফল ব্যবসায়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত জয় চৌধুরী। তিনি ১৯৮০ সালে স্নাতকোত্তরের জন্য প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। জ্যাকসনভিলস জাগুয়ারের মালিক শহীদ খান ১৬ বছর বয়সে পরিবারের সব সঞ্চয় দিয়ে টিকিট কিনে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের উদ্দেশে উড়াল দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এক রেস্তোরাঁয় থালাবাসন ধোয়ার চাকরি পান ঘণ্টায় ১ দশমিক ২০ ডলার মজুরিতে। তাঁর মতে, সেই মজুরিও ছিল তাঁর দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের চেয়ে বেশি। সেখান থেকেই কৃতজ্ঞতা, বিনয় আর নিজের ওপর বিশ্বাসের ওপর ভর করে যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩০ মিলিয়ন বা তিন কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন।
২০২২ সালে তাইওয়ানের মোট শতকোটিপতি ছিল মাত্র চারজন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। এ ছাড়া নারী অভিবাসী শতকোটিপতির সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ১৭। ২০২২ সালে যা ছিল মাত্র ১০ জন। দেখে নেওয়া যাক, কোন দেশের কতজন শতকোটিপতি এই অভিবাসী ধনীর তালিকায় আছেন। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি শতকোটিপতি অভিবাসীর জন্মস্থান ভারত। ভারতীয় শতকোটিপতি অভিবাসীর সংখ্যা ১২। দ্বিতীয় স্থানে আছে ইসরায়েল। এই দেশে জন্মগ্রহণ করা শতকোটিপতি অভিবাসীর সংখ্যা ১১। সমসংখ্যক ধনী নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন তাইওয়ান। নয়জন ধনী নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে কানাডা। আটজন নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে চীন। ছয়জন নিয়ে যৌথভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে আছে জার্মানি ও ইরান। পাঁচজন নিয়ে অষ্টম স্থানে আছে ফ্রান্স। চারজন নিয়ে নবম ও দশম স্থানে আছে ইউক্রেন ও হাঙ্গেরি। ২০২৫ সালের তালিকায় সবচেয়ে বেশি যুক্তও হয়েছেন ভারতীয় শতকোটিপতিরা। নতুন ভারতীয়দের মধ্যে আছেন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী বা সিইও সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা ও সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান পালো আলটো নেটওয়ার্কের সিইও নিকেশ অরোরা।
১.ইলন মাস্ক
অভিবাসী শতকোটিপতিদের মধ্যে শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের (৫৪) জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর কানাডা হয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি। টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্কের সম্পদমূল্য বর্তমানে ৪১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার।
২.জেনসেন হুয়াং
দ্বিতীয় স্থানে আছেন এনভিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেনসেন হুয়াং। তাইওয়ানে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তীকালে থাইল্যান্ড হয়ে ৯ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তাঁর সম্পদ এখন ১৫০ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ১০ কোটি ডলার।
৩.সের্গেই ব্রিন
তৃতীয় স্থানে আছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন (৫১)। ইহুদি–বিদ্বেষের সমুম্খীন হয়ে মাত্র ছয় বছর বয়সে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার।
৪.টমাস পেটেরফি
হাঙ্গেরির বংশোদ্ভূত টমাস পেটেরফি আছেন চতুর্থ স্থানে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৭৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার।
৫.মিরিয়াম আডেলসন
পঞ্চম স্থানে আছে ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মিরিয়াম আডেলসন অ্যান্ড ফ্যামিলি। এই পরিবারের সম্পদমূল্য ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার।
৬.রুপার্ট মারডক
ষষ্ঠ স্থানে আছে রুপার্ট মারডক অ্যান্ড ফ্যামিলি। এই পরিবারের সম্পদমূল্য ২৪ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলার।
৭.পিটার থিয়েল
সপ্তম স্থানে আছেন জার্মান বংশোদ্ভূত পিটার থিয়েল। তাঁর সম্পদমূল্য ২৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩২০ কোটি ডলার।
৮.ইয়ান কৌম
অষ্টম স্থানে আছেন ইউক্রেনের ইয়ান কৌম। তাঁর সম্পদমূল্য ১৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার।
৯.জয় চৌধুরী
।নবম স্থানে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জয় চৌধুরী। তাঁর সম্পদমূল্য ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার। হিমালয়ের প্রত্যন্ত শহর থেকে ওয়াল স্ট্রিটে তাঁর উত্থান রীতিমতো স্বপ্নের মতো। এমনকি তাঁর গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সব স
১০.জন ত
দশম স্থানে আছেন চীনা বংশোদ্ভূত জন তু। তাঁর সম্পদমূল্য ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলার।