মেটা (Meta) তাদের জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপকে (WhatsApp) শুধুমাত্র চ্যাটিং অ্যাপের গণ্ডি পেরিয়ে একটি ‘সুপার অ্যাপ’-এ রূপান্তরিত করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উইচ্যাট (WeChat), আলিপে (Alipay) এবং গ্র্যাব (Grab)-এর মতো সফল সুপার অ্যাপগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে হোয়াটসঅ্যাপকে পেমেন্ট, অনলাইন শপিং, খাবার ডেলিভারি এবং আরও অনেক কিছুর সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে মেটা।
কেন এই পরিবর্তন?
গত দশকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং সেগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই ডেটার সিংহভাগই আসে প্ল্যাটফর্মে কাটানো সময় এবং ব্যবহারকারীদের কার্যকলাপ থেকে। মেটা বিশ্বাস করে, একটি সুপার অ্যাপ তৈরি করার মাধ্যমে তারা ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপে আরও বেশি সময় ধরে রাখতে পারবে, যা নতুন রাজস্ব আয়ের পথ খুলে দেবে।
লক্ষ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া:
মেটা বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারকে লক্ষ্য করছে, যেখানে মোবাইল-প্রথম জনসংখ্যার আধিক্য এবং দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল অর্থনীতি রয়েছে। এই অঞ্চলে অনেক ব্যবহারকারীর কাছে স্মার্টফোনই ইন্টারনেটে অ্যাক্সেসের প্রধান মাধ্যম, ফলে একটি অল-ইন-ওয়ান অ্যাপের ধারণা তাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই অঞ্চলে অনলাইন পেমেন্ট এবং ই-কমার্সের দ্রুত বিস্তার সুপার অ্যাপের জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
সুপার অ্যাপের সম্ভাব্য ফিচারসমূহ:
হোয়াটসঅ্যাপে ইতিমধ্যেই কিছু বিজনেস টুল চালু করা হয়েছে, যেমন:
- বিজনেস প্রোফাইল (Business Profiles): ছোট এবং মাঝারি ব্যবসার জন্য প্রোফাইল তৈরি করার সুবিধা।
- ক্যাটালগ (Catalogs): পণ্য বা পরিষেবার তালিকা প্রদর্শনের জন্য।
- শপিং কার্ট (Shopping Carts): সরাসরি অ্যাপ থেকে কেনাকাটা করার সুবিধা।
ভবিষ্যতে, হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হতে পারে:
- ইন-অ্যাপ পেমেন্ট সিস্টেম (In-app Payment System): সরাসরি মেসেজের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন।
- ফুড ডেলিভারি (Food Delivery): অ্যাপের ভেতর থেকেই খাবার অর্ডার করার সুবিধা।
- রাইড-হেলিং সার্ভিস (Ride-hailing Services): উবার বা পাঠাও-এর মতো রাইড বুকিং।
- স্বাস্থ্যসেবা বুকিং (Healthcare Bookings): অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের সুবিধা।
- সরকারি পরিষেবা (Government Services): কিছু মৌলিক সরকারি সেবা প্রাপ্তি।
চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা:
হোয়াটসঅ্যাপের জন্য এই সুপার অ্যাপের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রবিধান, ডেটা প্রাইভেসি সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং বিদ্যমান সুপার অ্যাপগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা এই যাত্রাকে কঠিন করে তুলতে পারে। তবে, হোয়াটসঅ্যাপের বিশাল ব্যবহারকারী ভিত্তি এবং মেটার প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। যদি মেটা সফল হয়, তবে হোয়াটসঅ্যাপ শুধু একটি মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হবে।